
ব্যথা- জীবনের শুরুতে, জীবনের শেষে
ব্যথার সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ কি আছে?
মা ব্যথা সহ্য করে শিশুর জন্ম দেয়। শিশু মায়ের গর্ভ থেকে ব্যথা পেয়েই ভূমিষ্ঠ হয়। সেই ব্যথার আর্তচিৎকার দিয়েই জানান দেয়, সে পৃথিবীতে এসেছে।
ব্যথা একটি অভিজ্ঞতা।
কাঁটা ফুটলেই ‘উঃ’, হোঁচট খেলেই ‘আঃ’, ছ্যাঁকা খেলেই ‘ইস’।
সারা জীবন ধরেই আমাদের সকলকে ব্যথার অভিজ্ঞতা নিতে হয়। ছোট-খাট ব্যথার কোন শেষ নেই । তারপর আছে বড় বড় ব্যথা।
মৃত্যু-যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা আমাদের করো নেই। তবু এ ব্যথার খবর আমরা সবাই জানি।
কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন, ব্যথা জিনিসটা আসলে কি?
কেন ব্যথা হয়?
ব্যথা বুঝি কেমন করে?
ব্যথা কি?
আগেই বলেছি ব্যথা একটি অভিজ্ঞতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যথার সংজ্ঞা বুঝতে হলে আমাদের দেহের গঠন সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া দরকার।

আমাদের দেহ গঠনের ক্ষুদ্রতম একক হলো কোষ। অনেকগুলো কোষ মিলে একই কাজ করলে তাকে আমরা বলি টিস্যু বা কলা। কতগুলো কলা মিলে এক একটি বিশেষ অঙ্গ তৈরি করে। অঙ্গ আসলে কয়েকটি অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত অঙ্গ-তন্ত্রের অংশ। আমাদের দেহ কয়েকটি অঙ্গতন্ত্রের সমষ্টি।
ইন্টান্যাশনাল এসোসিয়েশ ফর দ্য স্টাডি অব পেইন (আইএএসপি) নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, ব্যথা হলো একটি ইন্দ্রিয়জাত অপ্রীতিকর অনুভুতি এবং আবেগজনিত অভিজ্ঞতা যেটি আমাদের শরীরের টিস্যুর ক্ষয় বা সাম্ভাব্য ক্ষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এটি এমন একটি অনুভূতি যার দ্বারা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিস্যুর অতিরিক্ত ক্ষতিকে প্রতিরোধ করে মেরামত করে।
বিষয়টিকে আমরা পরিষ্কার করব। তার আগে ব্যথার রকম-সকম একটু জেনে নিই।
ব্যথার রকম-সকম
অনুভবের দুই ধরন
১. নসিসেপটিভ পেইন
নসিসেপটিভ পেইন সাধারণত টিস্যুর ক্ষতের কারণে সৃষ্ট। এই ব্যথা মোটামুটি সকলের কাছেই পরিচিত। পুড়ে গেলে, খোঁচা খেলে, পোকার দংশনে, ক্ষতের কারণে এই ব্যথা হয়।
২. নিউরোপ্যাথেটিক পেইন
দেহের যে অংশ আমাদের ঐচ্ছিক ও অনৈচ্ছিক কাজগুলি সমন্বয় করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে সংকেত প্রদান করে তার নাম স্নয়ুতন্ত্র। মস্তিষ্ক হল আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। আর মেরুদণ্ড হল প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র।
নিউরোপ্যাথেটিক পেইন দেখা যায় স্নায়ুতন্ত্রে আঘাতের কারণে। আঘাত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র যেকোনো তন্ত্রেই হতে পারে।
যদিও এই ব্যথা অনুভব করা যায় কম কিন্তু এই ক্ষত মারাত্মক। এই ব্যথার ধরণ হল বৈদ্যুতিক ক্ষত বা পুড়ে যাওয়া ক্ষতের মতো। এই ব্যাথা বেশিরভাগ সময় বুঝা যায় না।
এ ছাড়াও কিছু ব্যথার কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে উল্লেখ করা হয়। আমরা সেগুলির বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না।
গতির দুই ধরন
১. দ্রুত ব্যথা
ব্যাথার উদ্দীপনার ০.১ সেকেন্ড এর মধ্যে আমরা যে ব্যাথা টের পাই। যান্ত্রিক, তাপীয় উদ্দীপনায় সৃৃষ্ট। এর ফলে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হয়। হাতে সুঁই ফোটানোর মতো।
২.ধীর ব্যথা
ব্যাথার উদ্দীপনার ১ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় পর যে ব্যথা অনুভব করি। পুড়ে গেলে,ফোঁড়ার কারণে এই ব্যথা অনুভূত হয়।
[আরো পড়তে পারেন: বিশ্বের ১০ প্রতিভা: মানসিক অসুস্থ হয়েও যাঁরা সফল ]
উৎপত্তি অনুসারে তিন রকম
১. অগভীর ব্যথা
যে ব্যথা শরীরের চামড়া এবং মিউকাস মেমব্রেন বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে অনুভূত হয়।
২.গভীর ব্যথা
যে ব্যথা শরীরের গভীর অংশে অনুভূত হয়।
৩.আন্তর্যন্ত্রীয় ব্যথা
শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো অঙ্গে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা, স্ফীতি, খিঁচুনি, মস্তিষ্কের কোন সমস্যা, অনৈচ্ছিক পেশী সংকোচন, পেশীতে টান বা পেশীর অতিরিক্ত ব্যবহার, ক্ষত, বাত, অস্থিভঙ্গ, পাকস্থলীতে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এই ব্যথার কারণ।
এছাড়াও বিভিন্ন অসুস্থতা বা ডিসওর্ডার যেমন ফ্লু, ঐচ্ছিক পেশীর ব্যথা (ফাইব্রোমিয়ালজিয়া), পেটব্যথা, পেটফাঁপা, পেটে অস্বস্তি, পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য
এই ব্যথার কারণ হতে পারে।
এই ব্যথার অন্যরকম উপসর্গ হচ্ছে বমি বমি ভাব, মাথা ঝিম ঝিম করা, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা, অস্বস্তি বোধ, বিষণ্ণতা, ক্রোধ ইত্যাদি।
[আরো পড়তে পারেন: শ্যাম্পু এল কেমন করে ]
বিশেষ ব্যথা- রেফার্ড পেইন
উৎপত্তিস্থানে ব্যথা অনুভূত না হয়ে অন্য স্থানে অনুভূত হলে তাকে রেফার্ড পেইন বলে। ভিন্ন স্থান দুটি একটি স্নায়ু দ্বারা সংযুক্ত থাকে। যেমন-হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত কারণে বাম বাহুতে ব্যাথা অনুভূত হয়। আবার অনেক সময় কাঁধের উঁচু স্থানে ব্যাথা হয়। মধ্যচ্ছদার মাঝামাঝি কোন স্থানে অস্বস্তির কারণে এটি হয়ে থাকে।
[আরো পড়তে পারেন: সামুদ্রিক কচ্ছপ: এক প্রাগৈতিহাসিক প্রাণি ]
ব্যথা বুঝি কেমন করে?

ধরা যাক, কাপড় ইস্ত্রি করতে গিয়ে আপনি হাতে ছ্যাঁকা খেলেন। এতে আপনার হাতের টিস্যু ক্ষতি হতেও পারে বা নাও হতে পারে। কিন্তু আপনার হাতে থাকা নসিসেপটর নামক বিশেষ সংকেত প্রদানকারী কোষ তাৎক্ষণিক সক্রিয় হয়ে উঠবে। নসিসেপটর এই ক্ষতি হওয়ার বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কার খবর দ্রুততম সময়ে ডরসাল রুট গ্যাংগ্লিয়া হয়ে নিকটতম মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ডে নিয়ে যায়।

মেরুরজ্জু হল, শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে মস্তিষ্কে তথ্য যাওয়া-আসার সুপার হাইওয়ে। ছ্যাঁকা খাওয়ার খবর এই সুপার হাইওয়ে হয়ে মস্তিষ্কের করটেক্স নামক স্থানে পৌঁছে যায়। সেখানে নিউরন ও গ্লিয়া নামের দুই ধরনের কোষ এই তথ্য গ্রহণ করে। মস্তিষ্কের যে যে অংশের এ ব্যাপারে কাজ করার আছে তারা এই তথ্য সেই সব অংশে পাঠিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের আর এক কোষ-নেটওয়ার্ক সেলিয়্যান্স সক্রিয় হয়। সেলিয়্যান্স ঘটনার ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী ও সক্রিয় করে তোলে। সংকেত পাওয়া মাত্রই সেলিয়্যান্স মেরুরজ্জুর সুপার হইওয়ে ব্যবহার করে হাতকে নির্দেশ পাঠিয়ে দেয়। আর দ্রুত আমরা তপ্ত আয়রন থেকে হাত সরিয়ে নিই। এটা হল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু এখানেই সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। এর মধ্যেই মস্তিষ্কের আরো একটি অংশ সচল হয় এবং দুই ধরনের ক্যামিকেল নিঃসরণ করে। এনডরফিনস, এনক্যাফালিনস। এই ক্যামিকেলগুলি ব্যথা কমাতে এবং সারাতে সাহায্য করে।
এই পুরো কাণ্ডটি ঘটতে সময় লাগে ০.১ সেকেণ্ড।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের শরীর ব্যথার উপসর্গগুলি সারিয়ে তুলতে সক্ষম। কোন কোন ক্ষেতে তা সময় সাপেক্ষ হতে পারে। তবে ব্যথার পরিমাণ বেশি হলে এবং আঘাত বা ক্ষতের পরিমাণ মারাত্মক হলে অবশ্যই ডাক্তার ও ওষুধের শরণাপন্ন হতে হবে।
Future of ED treatments. buy cialis malaysia Current ED treatments.
[…] ব্যথা বুঝি কেমন করে? […]